MMonir Trainer 2 years ago |
সময় থাকতেই সময়ের মর্ম বুঝতে হয়।
বিয়ে করার বাসনা লালন করেছিলাম। বিয়ে হলো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝলাম। এটাতো পূর্ণতা না। সাংসারিক পূর্ণতা আসে সন্তানে।সন্তান আসলো। পিতা হলাম।আবার বুঝলাম। এই ছোট গৃহে সংকুলান হচ্ছেনা। কাজ বাড়িয়ে দিলাম। পরিশ্রমের কমতি নেই।সফল হলাম। ছোট এ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে বড় বাড়িতে ওঠলাম। ঘরে স্ত্রী সন্তানদের কোলাহল। চারপাশ মুখরিত।
সময় যায়। দ্রুত যায়। বছরগুলো যেন ঝরাপাতার মতো পড়তে থাকে।সময় যত গেলো।সন্তানরাও বড় হলো। একসময় নিজের বিয়ের বাসনা ছিলো। এখন সন্তানদের বিয়ের বাস্তবতা তাড়া দিলো। দায়িত্বের পর দায়িত্ব । দায়িত্ব নামক জলের ঘটি- পুকুর হয়। পুকুর দীঘী হয়। দীঘী সমূদ্র হয়।এই উন্মাতাল জীবন সমূদ্রে অবসরের সময় কই। এতো পরিশ্রমে শারীরিক শ্রান্তিতে অবসাদ আসতে লাগলো ঝড়োগতিতে। একটু যদি জিরোতে পারতাম। একটু যদি দাঁড়াতে পারতাম। বৃক্ষ যেমন দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তেমনি। এই বাসনাও পূর্ণ হলো। চাকুরি থেকে অবসর পেলাম। এবার একেবারে অখন্ড অবসর।
এখন, দেখি। এই অবসরে একেবারে একা। চারপাশে কেউ নেই। কেউ পাতা হয়ে ঝরে গেছে। কেউ মেঘ হয়ে ওড়ে গেছে। কেউ একেবারে তারা হওয়ার আগেই তারা হয়ে গেছে।
এই অবসরে- দুয়েক লাইন কোরআন শরীফের আয়াত মুখস্ত করার চেষ্টা করি।পারিনা। স্মরণশক্তি প্রতারণা করে।আত্মশুদ্ধির জন্য উপবাস করারও চেষ্টা করি। পারিনা। শারীরিক দূর্বলতাই জয়লাভ করে। ভোরে ওঠে জায়নামাজে দাঁড়াতে গেলে -কষ্ট হয়। শরীরটা ফেটিগড হয়ে গেছে। বুঝি। আমি মোহের মায়ায়- সময়ের খেয়ায় দৌড়ে দৌড়ে জীবনটা খুইয়েছি। অথচ, আসল জিনিসটাই বুঝি নাই । যা বুঝার জন্য বারবার নবী সাঃ তাগাদা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- ব্যস্ততার আগে অবসরের, বার্ধ্যকের আগে তারুণ্যের, অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতার , খরচের আগে মিতব্যয়িতার আর মৃত্যুর আগে জীবনের গুরুত্ব দিতে।
কিছুদিন আগে একটা ছবি দেখলাম। লায়ন অব ডেজার্ট। ওমর মুখতারের জীবন কাহিনী। বিশবছর ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির বিরুদ্ধে লিবিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে যার ফাঁসী হয়। ওমর মুখতার ছাত্রদের তালিম দিয়ে বলছেন- পবিত্র কোরআনে কেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পাল্লার কথা বলেছেন?
ছাত্ররা বলে -কেন?
ওমর মুখতার বলেন- পাল্লা হলো ব্যালেন্স। আর ব্যালেন্স না থাকলে সব কিছু পড়ে যায়।
সবকিছুই একটা ব্যালেন্সের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে।
কি একটা গভীর তাৎপর্যময় কথা।
জীবন চালাতে গেলে- সংসার থাকবে, জীবিকা থাকবে। সব ছেড়ে দিয়ে একেবারে সন্যাস হলে চলবেনা। ব্যালেন্সটা ঠিক করতে হবে। আর এই ব্যালেন্স ঠিক রাখতে গিয়ে দুনিয়ার পাল্লা একটু গড়বড়ে হয়ে গেলেও খেয়াল রাখতে হবে- আখেরাতের পাল্লাটা যেন সবসময় ঠিক থাকে। কারণ এটাই স্থায়ী এবং আসল। আর দুনিয়াটা- এক শুণ্যে ভাসা বাবল। বাবলের চাকচিক্য এই আছে এই নাই। জীবনটাও এমন। নিঃশ্বাস এই আছে- এই নাই।
বয়স থাকতেই সময়ের মর্ম বুঝতে হয়।
(সংগৃহীত)
Alert message goes here